শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অং সান সুচি তার নোবেল বক্তৃতায়........




দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে:
এফ পি ২০১২ সালে অসলোয় অং সান সুচি তার নোবেল বক্তৃতায় অসাধারণ, চমৎকার কিছু কথা বলেছিলেন ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার দুইদশকের বেশি সময় পর অসলোতে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন মিয়ানমারেরগণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সুচি। নোবেল বক্তৃতায় সুচি উল্লেখ করেন, তাঁর দেশে বহু নৃতাত্ত্বিক ধর্মবিশ্বাসের জনগোষ্ঠী আছে। দেশের সবার মধ্যে সত্যিকারের ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি
সুচি সে বক্তৃতায় বিশ্ববাসীর প্রতি এক আবেগ ঘন আবেদন জানিয়েছিলেন। ক্ষুধা, রোগ, বাস্তুচ্যুতি, কর্মহীনতা, দারিদ্র্য, অবিচার, বৈষম্য, সংস্কার, গোঁড়ামি যুদ্ধের ভুক্তভোগীদের ভুলে না যাওয়ার আহ্বানছিল তাঁর। যেখানেই দুঃখ-কষ্ট উপেক্ষিত, সেখানেই সংঘাতের বীজ রোপিত হবে বলে জোর গলায় ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি
সুচির দল এনএলডি এখন মিয়ানমারের ক্ষমতায়। থিনকিউ প্রেসিডেন্ট হলেও স্টেটকাউন্সিলর সুচিই কার্যত সরকার চালান। আর সবচেয়ে বড় পরিহাস হলো, আজ সুচির দেশেই অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য, দমন-পীড়ন, বাস্তুচ্যুতি, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, হত্যাযজ্ঞ দেদার চলছে। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা বহুবছর ধরে বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বসবাসকরেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত। নিজদেশে তাঁরা পরদেশি। বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধজন গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদেরআউটসাইডারমনেকরে। বিপন্ন এই জনগোষ্ঠীর পাশে কেউ নেই দেশটির সরকারও একই পথের পথিক। সংগতকারণে ন্যূনতম মৌলিক অধিকারও জোটেনা রোহিঙ্গাদের কপালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়ে ছারখার। নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়। পাখির মতো মারাহয় রোহিঙ্গাদের। প্রাণ বাঁচাতে পালাতে গিয়ে নাফনদীতে ডুবেমরে।
সুচির নোবেল বক্তৃতার একটি অমোঘ বাক্য সত্য হয়ে অবদমিত রোহিঙ্গাজন গোষ্ঠীর একটি অংশের মাঝে প্রকাশিত হয়েছে। উপেক্ষায় সংঘাতের বীজ রোপিত হয়েছে
রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৪ আগস্ট জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফিআনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রাখাইনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের দিন রাতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসার যোদ্ধা রারাখাইনে ৩০টি পুলিশ স্টেশনে একটি সেনাঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালায়। হামলায় পুলিশ, আরসার যোদ্ধা সহ অন্তত ১১০ জন নিহত হয়। হামলার ছুতোয় রাখাইনে নির্বিচারে দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের বাহিনী
চলমান নৃশংসতার মুখে গত দুই সপ্তাহে প্রায় দুইলাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছেন। এই সময়ে নাফ নদী পারহতে গিয়ে নৌকাডুবে শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গার প্রাণ হারায় রাখাইনেকরুণ দশায় বাইরের মানুষ সরব হলেও মিয়ানমারের কথিত শান্তি কামী মানুষটি পুরোপুরি নীরব। তাঁর অনেক হিসাব। সেনাবাহিনীর চাপ, কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের চাওয়া, ভোট, ক্ষমতা ইত্যাদি ইত্যাদি
যে সুচি মানবাধিকার গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করে বিশ্বের সামনে নিজেকেআইকনহিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন, তাঁকে এখন অচেনা লাগে। তাইতাঁর শান্তির নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি পর্যন্ত উঠেছে মালালা ইউসুফজাই শান্তিতে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল জয়ী, সুচির নীরবতার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়ে এই সংখ্যা লঘু জনগোষ্ঠীকে আপন করে নেওয়ার প্রক্রিয়া অন্তত শুরু করতে পারেন
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফজলুলহক প্রথম আলোকে বলেন, বদরমোকাম এলাকার উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনাঘটে। নৌকাডুবির পর অনেকে সাঁতরে তীরে উঠেছেন। এখান থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছেসাঁতরে তীরে উঠা কয়েকজন রোহিঙ্গার বরাত দিয়ে ফজলুলহক বলেন, শতাধিক রোহিঙ্গা এখনো নিখোঁজ। মোহনা অতিক্রম করার সময় নৌকা উল্টেযায়। একেকটি নৌকায় ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রীছিল, যা ধারণ ক্ষমতার বেশি সাবরাং ইউপির নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিন বলেন, পশ্চিম পাড়া সৈকত থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে টেকনাফ সদরের নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহ আলম বলেন, লম্বুবিহটি থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে
নির্বিচারে হত্যা বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ায় প্রাণেবাঁচতে রোহিঙ্গারা দলেদলে বাংলাদেশে ঢুকছে প্রায়দুই সপ্তাহ ধরে তারা আসছে এবং এখন ছড়িয়ে পড়ছে কক্সবাজার ওবান্দরবান জেলার গ্রামগঞ্জে এপর্যন্তবাংলাদেশে এসেছে,  প্রায় ১লাখ ৮০হাজার  রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ টেকনাফ উখিয়ার পাঁচটির বেশি রোহিঙ্গাশিবিরে আশ্রয়নিলেও অনেকে গ্রামগঞ্জে ঢুকে পড়ছে। সীমান্ত পার হওয়ার সময় রোহিঙ্গারা গত কয়েক দিনে তেমন কোনো বাধার মুখে পড়েনি বলে জানিয়েছে। টেকনাফ উপকূলে ইউপিচেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের উখিয়া টেকনাফের বিভিন্নরোহিঙ্গাশিবিরেপৌঁছে দেওয়ার জন্য জনগণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে
জকির আহমদ বলেন, গত বছরের হামলা আর বছরের হামলার ধরন আলাদা। গত বছর যুবতীদের ধর্ষণ করা হতো। বার সেরকম অভিযোগ তেমনপাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের ছালিপ্রাং এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি। স্বামী কামাল হোসেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তাঁর ছোটছোট সাতমেয়ে তিনছেলে। চারদিন ধরে তাদের নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে খুবই কষ্ট হয়েছে এই দম্পতির। শেষ ঠিকানা কোথায় সেটা তাঁর জানা নেই
রোহিঙ্গারাজানায়, গতকাল ভোরে নাফনদীর গোলার মুখ এলাকায় ৩৮জন রোহিঙ্গাসহ একটি নৌকাডুবে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রত্যক্ষ দর্শীর ভাষ্যমতে, গতকাল একদিনেই টেকনাফের নাইটংপাড়া, লেদা, জাদিমুরা, নীলা, কানজারপাড়া, হোয়াইক্যং, উখিয়ারমনখালী, ছেপটখালী, বালুখালী, রহমতেরবিল, আনজুমানপাড়া, ধামনখালী, নাইক্ষ্যংছড়ির আমবাগান, তুমব্রু, ঘুমধুম, আসারতলী, দোছড়িসহ অন্তত ৩৯টি পয়েন্ট দিয়ে ঢুকেছে প্রায় ৫৭হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে টেকনাফ উপজেলায় ৪২হাজার, উখিয়ায়১০হাজারওনাইক্ষ্যংছড়িতে৫হাজার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের দায়িত্বশীল কয়েকজন মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়াসহ এই সমস্যার সমাধানে গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা চায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতথেকে প্রাণে বাঁচতে দুই সপ্তাহে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এদেশে ঢুকেপড়েছে বাংলাদেশ মানবিককারণে এদের আশ্রয়দিয়েছে
এদিকে রাখাইনে চলমান সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিনঅংলায়েং। ১সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিডোতে এক অনুষ্ঠানে তিনি রাখাইনের অসমাপ্ত এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাঁরদাবি, আগের সরকার সেখানকার সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। বর্তমান সরকার তা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী  রেতনোমার সুদি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য যে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা নিরসনে সহযোগিতা করতে তাঁরদেশ প্রস্তুত আছে। ইন্দোনেশিয়া আশাকরে, রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়কর বর্তমান পরিস্থিতির অবসানহবে। গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি হোটেলে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মারসুদি একথা বলেন। এর আগে তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন এন এইচ সি আরের মুখপাত্র। তিনি বলেন, সংঘাতের কারণে যারা পালিয়ে আসছে, তাদের জায়গা দিতেই এন এইচ সি আর বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে। নতুন যারা আসছে, তাদের নিবন্ধন করা হলে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর পক্ষে গুরুত্ব বিবেচনা করা এবং সহায়তা করা সম্ভব হবে
আসলাম খান বলেন, সোমবার ইউ এন এইচ সি আর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিছু কাপড়, প্লাস্টিক শিট এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। প্রতিদিন শতশত নতুন শরণার্থী আসায় কুতুপালং এবং নয়াপাড়া শরণার্থী শিবির ভেঙেপড়ার উপক্রম হয়েছে। নতুন শরণার্থীদের আগের শরণার্থী পরিবার, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, মাদ্রাসা এবং ছাউনি দেওয়া অবকাঠামোয় আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক জায়গা পাওয়া যাচ্ছেনা। আরও শরণার্থী আসতে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রয়োজন
সরকারেরকূটনৈতিকদুর্বলতা
রিজভী অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক দুর্বলতা ফুটেউঠেছে। যার কারণে রোহিঙ্গা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা বিধানের দাবি জানান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন