‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ অথবা ‘জয় বাঙলা বাঙলার জয়’ এরকম হাজারো স্লোগান বাঙ্গালির রক্তে জালিয়েছে আগুন, দিয়েছে অনুপ্রেরণা, যা শুনে এখনো আমরা শিহরিত হই। আমাদের রক্তেও জেগেওঠে দেশ প্রেম। আজও দিনের শুরুটা হয় ‘আমার সোনার বাঙলা আমি তোমায় ভালবাশি’, আজও শপথ বাক্য পাঠ করে দিন শুরু হচ্ছে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠনে। আমি বা আমরা সবায় জানি আমরাও দেশকে ভালবাশি, আমাদের মাঝেও আছে দেশপ্রেম, আমরাও গাইতেপারি দেশত্তবধক গান,আমরাও শির উচু করে স্লোগান দিতে পারি।
আমাদের কিশের অভাব, আমরা সেই বাঙালী, বীরের জাতী আমরা। একজন দেশ প্রেমিক হিসেবে বলছি, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বলছি। আমরা কি আমাদের বীরত্ব বজায় রাখতে পেরেছি, স্বাধীনতার মান রাখতে পেরেছি। পারিনি। প্রায় ১৬কোটি মানুষের নিবাস আমাদের স্বর্গ ভূমিতে। প্রায় ৩০লাখ শহীদের রক্তে আঁকা, ২লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমে সাজান আমাদের জন্মভূমি। কেবল মাত্র ১৬ হাজার লোকের জন্য এতকিছু । এই কয়েটা লোকের জন্যই কি এতকিছু। আজো হাজার হাজার ‘রাজন’ শিশু নিরজাতনের শিকারহচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছে,আজো কত ‘তনু’ তার সম্ভ্রম হারাচ্ছে, এখনো কত ভাই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে, কত শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছে, ছাত্রের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে, প্রতীক্ষনে কলঙ্কিত হচ্ছে আমার মাতৃভূমি। আমাদের কিসের অভাব- তাইতো, আমরা হারিয়েছি আমাদের একতা, মূল্যবোধ, হারিয়েছি নিজেকে চেনার ক্ষমতা। আর যা পেয়েছি তা কোন কাজের না। পুরটায় ক্ষতি ‘লোভ’ কখনো ক্ষমতার লোভ, কখন অর্থের, আর এই লোভের কারনে পাহাড় হচ্ছে সমতল, সমতল হচ্ছে দখল, নদী হচ্ছে ভরাট, বন হচ্ছে উজাড়, এ যেন দখলের উৎসব। আর এর সাথে যোগ হয়েছে শিশু আর নাড়ীদেহ লোভি মানুষ রুপে জানোয়ার। কিছু স্বার্থপর মানুষ যারা নিজের স্বার্থের জন্য এসব করে থাকে।
একটু পেছনে যাওয়া যাক ১৭৫৬সালের দিকে, তখন বাঙলা স্বাধীন। নবাব আলীবর্দি খা। পুরো বাঙলা যার কথায় উঠে আর বসে। সব ঠিকঠাক চলছিল, যে ভাবে তিনি চাচ্ছিলেন। কিন্তু নবাব আলীবর্দি খার মৃত্যুর সাথে সাথেই যেন ডুবে যায় স্বাধীন বাঙ্গালার সূর্য। বিশ্বাস ঘাতকতা করে ক্ষমতা লভি মীরজাফর, মীর কাসেম, রায়দুরলভ, জগতশেট, ফুপু ঘসেটি বেগম সহ আরও অনেকেই। সাজান যুদ্ধ পলাশীতেও বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও পরাজীত হয় বাংলার শেষ নবাব ‘নবাব শিরাজ-উদ্দ-দউলা’ স্বাধীন বাংলায় শুরু হয় পরাধিনাতার সূর্য গোনা।
এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। ১৯৪৭ধর্মের দোহায় দিয়ে ইংরেজরা আমাদের বিভক্ত দেয়। ১৯৫২ ভাষা আর মাতৃভাষার অধিকার নিয়ে শুরু হয়, নতুন বাংলার স্বপ্ন দেখা। শুরু হয় ঐক্যের, জাতীকে স্বাধীনতার সূর্য এনে দিতে। অনেক চড়ায়-উথরায় পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীন বাংলার নকশা একে দিলেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ প্রায় ৯মাস মুক্তি যুদ্ধের ফসল আমাদের এই বাংলাদেশ। ১৯৫২-১৯৭১ এখানে কারমনে কোন লোভ ছিলনা। ক্ষমতা বলেন আর অরথের বলেন। লোভ কোথাও ঠায় পাইনি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলা ফিরে পায় তার হারান স্বাধীনতা। শুরু হল নতুন করে ক্ষমতা লোভিদের উৎসব। ভূমি দস্যু, জলদস্যু,বনদস্যু এমন কি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ হিসেবে আসা ত্রাণগুলো চলে জেত ত্রাণদস্যুর হাতে। ১৯৭৫ শুরু হল নতুন অধ্যায়, কিছু ক্ষমতালভি পথভ্রষ্ট মানুষ রুপি হায়েনার হাতে ক্ষমতার জন্যই সবপরিবারে প্রাণ হারালেন স্বাধীন বাংলার জন্মদাতা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। পুর বিশ্ব নির্বাক এমন ঘটনায়। দেশের হাল ধরলেন ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’ তাকেও প্রাণ হারাতে হয় পথভ্রষ্ট কিছু হায়েনার হাতে। এর পর পালটে যায় রাজনীতির চিত্র। এখন ২০১৬ মাজখানে এত গুলো বছর আর কোন বরমাপের নেতা এভাবে মরেনি। এর মানে এই নয় যে ক্ষমতার লোভ নায়। রাজনীতিবিদরা জগনকে মনে করে পুতুল, আমাদেরকে তারা নাচিয়ে নিয়ে বেরায়। এজন্য এখন তারা মরেনা, প্রাণ যায় আমাদের। আগে ভোট আসলে জনগনের একটু কদর বাড়ত এখন আর নেই। আমাদের দুই নেত্রী স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এখন চুল ছেঁড়াছিঁড়ি করেন। একজন বলেন আমার বাবা আরেক জন বলেন আমার স্বামী, এর পর আসবে একজন বলবে আমার নানা আরেকজন বলবে আমার বাবা। এভাবে আর কত ? দেশতো আমরাই স্বাধীন করেছি।
এখনো কি ঐক্কের সময় আসেনি, আর কবে? গতকাল নারি ও শিশু পাচার হয়েছে , আজ ব্যাংক থেকে টাকা, আগামীকাল যে দেশ চুরি হবেনা সেটা কে বলতে পারেন। গতকাল ডুকেছে মরণ নেশা ইয়াবা, আজ অস্ত্র-গোলাবারুদ, আগামীকাল কি আসবে কে জানে। আমাদের নিজেদের মধ্যে কেন এত কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি, কেন এত হানাহানি। কেন অন্যকে সুযোগ করে দিবেন, নিজেদের মাঝে আসার। আমাদের দেশের দুই নেত্রি, ইনাদের কাজ একে অন্যের ঘাড়ে দোষ দেওয়া, কখনই নিজের দোষ স্বীকার করেননা। আমাদের দেশের এই দুই নেত্রীর অভস্থা এরকম যে এক জন আগুন ধরিয়ে দেয় আরেক জন সেখানে পেট্রোল ডেলে দেন। তখন সান্তনা দেওয়ার জন্য এক শ্রেণীর লোক বলেন, ঘড় পোরা গেছে তো কি হয়েছে তোমার ছাওয়াল দমকলতো দেখিছে। আর যার ঘড় পোরা যায় তারা নিজেদের সান্তনা দেন এভাবে, হামার ছাওয়াল দেখিল আর তোমার ছয়ালে খাইল আলু পোড়া। সারা বিশ্বে প্রতিদিন জঙ্গি, আইএস ও আত্নঘাতি হামলায় শত শত লোক মারাযাচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশ তাদের বিরোধী দলের দিকে আঙ্গুল তলেনি। বরং একসাতে হয়ে মকাবিলা করেছে সেই পরাশক্তির। আর আমাদের দেশে এর চিত্র পুরটায় উল্টো । সবদোষ জামাত-বিএনপি। আবার জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সব দোষ আওয়ামীলীগের, আর এদের মাঝখানে থেকে ময়দা হয়েছে নির্বোধ জাতিয় পার্টী।
স্বাধীনতার ৪৪বছর পরেও স্বাধীনতা আজ পানসে, কথা বলা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোথায়। ‘শাগর-রুনি’ ফিরবেন না আর কোন লোকালয়ে, বাবুল আক্তার তার বউকে আর ফিরে পাবেন না। আর কত ‘ব্লগার’ রাজীব হারিয়ে যাবে দিনের আলয় কেতা যানে। কোথায় আমাদের স্বাধীনতা, কোথায়? ছোট বেলায় পরেছিলাম স্বাধীনতা অরজনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। তখন হইত অতটা বুঝিনি, আজ যতটা বুঝছি। এখন আমাদের পালা, নতুন একটা যুদ্ধ করার সময় এসেছে। কোন রক্তপাত বা বৃষ্টিপাত না, শুধু মানবপাত। এযুদ্ধের বৈশিষ্ট হোল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমের মান রক্ষা করা। নুতন একটা স্লোগানে জাগিয়ে তোলায় হবে আমাদের মূলমন্ত্র।
‘বীর বাঙালী প্রতিবাদ কর স্বাধীনতা রক্ষা কর’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন